
ভার্সিটি লাইফ এর শুরুর দিকে আর্কিটেকচার স্টুডেন্টরা প্রায় সবাই কিছু সাধারণ ভুল করে থাকে। এসব ভুলের কারণে অনেক আর্কিটেকচার স্টুডেন্টরাই আশানুরূপ ফলাফল করতে পারে না এবং হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। অনেকে হতাশা থেকে ছেড়ে দেয় মাঝপথে।
অভিজ্ঞতার আলোকে আজকে আমি সেসব কমন ভুল গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। শুরুর দিকে করা এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলা গেলে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব।
১। ডেডলাইন মাথায় রেখে কাজ করা
আমরা আর্কিটেকচার স্টুডেন্টরা প্রায়ই ডেডলাইন মাথায় রেখে কাজ করতে পারিনা। যেমন, রবিবার ক্লাসে একটি প্রজেক্ট দেওয়া হল। ধরি, প্রজেক্টটি হলো একটি স্টুডিও এপার্টমেন্ট ডিজাইন। জমা দিতে হবে সামনের রবিবার। মাঝে পুরো এক সপ্তাহ সময় থাকলেও অধিকাংশ স্টুডেন্টরাই কাজটি করা শুরু করে জমার দিনের ১ থেকে ২ দিন আগে। কেউ কেউ তো রীতিমত জমার দেওয়ার আগের দিন রাতে শুরু করে কাজটি! ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকেই কাজটি শেষ করতে পারে না। কেউ কেউ টেনেটুনে শেষ করতে পারলেও কাজটি মানসম্পন্ন সয় না। অর্থাৎ ওয়ার্কমেন্টসিপ ভালো হয় না এবং ডিজাইন সল্ভে অনেক ভুল কিংবা ঘাটতি থেকে যায়। ফলাফল, খারাপ নাম্বার, খারাপ রেজাল্ট।
স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও নানা রকম মজার টপিক নিয়ে আমরা নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করে থাকি Shadhin School চ্যানেল এ। |
তাহলে ভালো রেজাল্ট করতে কি করতে হবে? উত্তরটি খুব সহজ। একবারে বসে পুরো ডিজাইন শেষ করার চেষ্টা করার চেয়ে ধাপে ধাপে ডিজাইন করতে হবে। যেমন, একটি প্রজেক্ট জমা দেওয়ার জন্য যদি ৭ দিন সময় হাতে থাকে তাহলে ৭ দিনকে প্লান করে ভাগ করে নাও।
প্রথম ২ দিন করো কেস স্টাডি, প্রজেক্টটিতে কি কি ফাংশন থাকবে তা বের করো। ভালো ভালো ডিজাইন দেখে আইডিয়া নাও, ভাবো সেগুলা কেনো ভালো ডিজাইন।
পরের ২দিন তোমার প্রজেক্ট এর বেসিক ডিজাইন নিয়ে ভাবো, স্কেমেটিক ড্রয়িং করো। তারপর নিজের ঐ ডিজাইন এর ভুলগুলো বের করো। বন্ধুদের সাথে আলাপ করো তোমার করা ডিজাইন নিয়ে। তারপর ভুল পেলে সেগুলা সল্ভ করো।
এরপর বাকি ৩দিন হাতে রেখে তোমার ডিজাইনকে ফাইনাল রুপ দাও। হাতে সময় নিয়ে কাজ করলে ওয়ার্কমেন্টসিপ ভালো না হয়ে উপায় নেই।
শেষের দিকে তাড়াহুড়া করে স্ট্রেস নিয়ে কাজ করে খারাপ নাম্বার পেয়ে হতাশ হওয়ার চেয়ে প্রতিদিন অল্প অল্প করে কাজ করে আগালে কাজটি যেমন ভালোভাবে শেখা যায় তেমনি কোনো প্রকার স্ট্রেস ছাড়াই সঠিক সময়ে কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়। সাথে ভালো নাম্বার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
আরো পড়তে পারো | সঠিক সময়ে সকল কাজ শেষ করার সহজ উপায় |
২। প্রতিদিন কাজ করে মেন্টর/টিচারকে দেখানো
এই কাজটির প্রতি কেনো জানি অধিকাংশ আর্কিটেকচার স্টুডেন্টরা অনিহা প্রকাশ করে! ক্লাসে শিক্ষকদের কাজ দেখাতে অধিকাংশ স্টুডেন্টরা কেনো জানি ইচ্ছুক না। অথচ প্রতিদিন একটু একটু করে ডেভেলপ করা কাজ যদি ক্লাসে শিক্ষককে দেখানো যায় তাহলে একটা ফিডব্যাক পাওয়া যায়। কাজটি সঠিকভাবে আগাচ্ছে কিনা যেমন বোঝা যায় তেমনি কোনো ভুল থাকলে তাও জানা যায় এবং ঐ ভুলগুলো সমাধান করে কাজটি ভালোভাবে আগানো যায়।
তাহলে নিয়মিত ক্লাসে কাজ দেখালে লাভ কার? অবশ্যই তোমার। কারণ নিজের অজান্তে করা ভুলগুলো সমাধানের সুযোগ যেমনি থাকে তেমনি প্রতিদিন অল্প অল্প করে কিছু না কিছু তো শিখতে পারছো।
আরো পড়তে পারো | ফেইল মানেই কি সব শেষ? |
৩। ভুল ডিজাইন প্রসেস
যেকোনো কিছু ডিজাইন করার জন্য বেসিক কিছু নিয়ম মেনে করতে হয়। আর্কিটেকচার স্টুডেন্টরা প্রায় সবাই একটি কমন ভুল করে থাকে। সেটি হচ্ছে Pinterest বা Google সার্চ করে ডিজাইন বের করে সেটি দেখে সেটির মতই কিছু একটা করতে চায়। ডিজাইন দেখে আইডিয়া নেওয়া অবশ্যই ভালো তবে সেটার মত কিছু করতে চাওয়াটা ভুল। কারণ অনেকেই google থেকে ডিজাইন দেখে সেটির মতই বাহ্যিক রুপ দিতে চায় তার ডিজাইনে। এতে করে তার প্রজেক্টে দেয়া বেসিক রিকোয়ারমেন্ট পূরণ না হয়ার সম্ভবনা থেকে যায়। ফলে ডিজাইনের ফাংশন সল্ভ করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
ডিজাইন করার মূলমন্ত্র হচ্ছে, আগে ফাংশন সল্ভ করা। তারপর ফাংশনগুলো rearrange করে চেষ্টা করতে হবে ডিজাইনটির বাহ্যিক রুপ সুন্দর করতে।
আরো পড়তে পারো | সফলতার ৭টি সুত্র |
উপরের এই ৩টি খুব সাধারণ ভুল। প্রায় সবাই শুরু দিকে এই ভুলগুলো করে থাকে।এই ভুলগুলো যদি ছাত্রজীবনের শুরুতে না করা যায়, তাহলে হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ভালো রেজাল্ট যেমন করা সম্ভব তেমনি ভালো একজন আর্কিটেক্ট হওয়ার পথে বড় আর কোনো বাঁধা থাকে না।
আরো পড়তে পারো |
ইনফিনিটি আসলে কতটা অসীম? |
পঙ্গপাল কি? কিভাবে এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব? |
Fake News বা গুজব কিভাবে চিনবে? |
যে ৩টি গাছ আমাদের ঘরের ভেতরের বায়ু বিশুদ্ধ করে |