
চিঠি লেখার প্রচলন আর নেই বললেই চলে। এর মুল কারন বর্তমান ডিজিটাল যুগ। যেখানে, মেসেঞ্জার, ওহাটসাঅ্যাপ কিংবা ইমেইল এর মাধ্যমে সেকেন্ডের মধ্যে বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে সেখানে চিঠির প্রচলন থাকবেই বা কিভাবে!
যোগাযোগের জন্য ইমেইল খুব গুরুত্তপূর্ণ একটি মাধ্যম। যতই আমরা মেসেঞ্জার কিংবা ওহাটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে যোগাযোগ কিংবা দৈনন্দিন কথাবার্তা চালায় না কেনো, ইমেইল এর দারস্ত আমাদের হতেই হয়। কখনো চাকরির আবেদন করার জন্য কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমাদের ইমেইলই একমাত্র হাতিয়ার। যেহেতু আমরা এখনো ইমেইল ব্যবহার এ ততটা অভ্যস্ত নয়, তাই আমাদের হয়ত বেশ কিছু বেসিক জিনিস অজানা।
আজ আমি সেইসব বেসিক জিনিসগুলো নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আসলেই না জানলেই নয়।
স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও নানা রকম মজার টপিক নিয়ে আমরা নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করে থাকি Shadhin School চ্যানেল এ। |
১. ইমেইল অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন
জিমেইল, ইয়াহু কিংবা যেখানেই ইমেইল এর জন্য রেজিস্ট্রেশন করো না কেনো, খেয়াল রাখবে নিজেদের সম্পূর্ণ নাম যেনো দাও প্রোফাইল এ, নিজের ছবি দেওয়াটাও খুব গুরুত্তপূর্ণ এক্ষেত্রে। আর ইমেইল আইডি (যেমনঃ [email protected]) তে নিজের নামের পাশাপাশি ১টা সংখ্যা ব্যবহারই যথেষ্ট। ইমেইল সাধারণত ক্যাজুয়াল কিংবা অফিসিয়াল যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই খেয়াল রাখবে অবাঞ্ছনীয় কিছু যাতে না থাকে (যেমনঃ [email protected] কিংবা [email protected])।
আরো পড়তে পারো | জীবনে সফল হতে হলে সবার আগে যা করনীয় |
২. TO, CC এবং BCC এগুলো মানে কি?
কাউকে ইমেইল করতে গেলে সবার শুরুতে যেটা থাকে সেটা হচ্ছে TO, তারপর CC এবং তারপর BCC থাকে। এগুলোর সব গুলোর কাজ প্রায় একই। যাকে মেইল করতে চাও তার ঠিকানা দিলেই চলে যাবে। এখন নিশ্চয় মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সব গুলার কাজ যদি একই হয় তাহলে এত অপশন দেওয়া হয়েছে কেনো? হ্যাঁ, এখানে একটু টেকনিক্যাল ইস্যু তো আছে বটেই। আর ইমেইল সম্পর্কে জানার জন্য এটা সব চেয়ে গুরুত্তপূর্ণ পার্ট।
TO: তুমি যাকে মেইল করতে চাও এখানে তার মেইল আইডি লিখবে। তুমি যদি একের অধিক মানুষ/প্রাপককে একই মেইল পাঠাতে চাও, তাহলে একটা আইডি লিখে কমা কিংবা স্পেস দিয়ে আর একটা লিখবে। এভাবে একের পর এক যত ইচ্ছা আইডি অ্যাড করতে পারবে।
CC: CC মানে হচ্ছে Carbon Copy। অর্থাৎ তুমি যাকে মেইল করতে চাচ্ছো তার ঠিকানা TO তে লিখলা। কিন্তু তুমি চাচ্ছ তোমার প্রাপককে তুমি যা মেইল করছো হুবুহু তা যেনো অন্য একজন দেখতে পারে। ঐ “অন্য একজন” এর ইমেইল আইডি তুমি CC তে লিখবে। মনে রাখবে, ঐ মেইল কনভারসেশন এ তোমার আর তোমার প্রাপক এর মধ্যে যত মেইল চালাচালি হবে, সব কিছু CC থাকা ঐ মানুষটি দেখতে পারবে এবং CC তে কে আছেন সেটা তোমার প্রাপকও জানতে পারবে।
BCC: BCC মানে হচ্ছে Blind Carbon Copy। এটি CC এর মতই কাজ করে। মুল পার্থক্য হচ্ছে তুমি যদি কাউকে BCC তে রাখো তাহলে তোমার প্রাপক জানতে পারবে না তোমার আর তার মধ্যেকার কনভারসেশন আর কেউ দেখতে পারছে, যেটি CC তে রাখলে জানতে পারতো।
CC এবং BCC এর মুল ব্যবহার একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে পরিষ্কার করে বলি। ধরো, তিনজন লোক, একজন A, একজন B এবং একজন C। A হচ্ছে কোনো অফিস এর বস। তিনি তার ম্যানেজার B কে বললেন তার পক্ষ থেকে C কে চাকরির অফার লেটার ইমেইল করতে। তাহলে ম্যানেজার B, C কে মেইল করবেন। এখানে C হচ্ছেন প্রাপক যিনি TO তে থাকবেন। আর বস A থাকবেন CC তে। তাহলে মুল ইমেইল চালাচালি হচ্ছে B এবং C এর মধ্যে কিন্তু CC তে থাকায় A পুরো ইমেইল কনভারসেশন দেখতে পারবেন এবং CC তে কে আছেন সেটি C তে থাকা প্রাপকও জানতে পারবেন।
কিন্তু বস A চাচ্ছেন না প্রাপক C জানুক তিনি দেখতে পারছেন সব, তাই তিনি ম্যানেজার B কে সেভাবে নির্দেশ দিলেন। তখন B, C কে ইমেইল করার সময় A কে BCC তে রাখবেন। তাহলে C জানতে পারবেন না তাদের মধ্যেকার মেইল অন্য কেউ দেখতে পারছেন কিনা।
আরো পড়তে পারো | মোটিভেশনের অভাব? |
৩. Subject Line
TO এর পর এবং ইমেইল এর সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ণ অংশ হচ্ছে Subject। তোমার সাবজেক্ট যদি ভালো না হয় তাহলে তোমার ইমেইল ওপেন না করার সম্ভাবনা ৬০%। আবার অনেকেই সাবজেক্ট এ কিছু না লিখেই ইমেইল করে থাকে। আবার অনেকে সাবজেক্ট দেয়ঃ Open Me, Read It, Hi ইত্যাদি। এ ধরণের সাবজেক্ট দেওয়া কিংবা আদৌ কোনো সাবজেক্ট না দেওয়া, উভয়ই তোমার মেইল Spam Box এ যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
সাবজেক্ট হতে হবে To The Point এবং ছোট। তাছাড়া যেহেতু এখন ৫০% মেইল মোবাইলে চেক করা হয় এবং মোবাইলে ৭-৮ ওয়ার্ড এর বেশি দেখা যায় না, তাই ৭-৮ ওয়ার্ড এর মধ্যেই সাবজেক্ট লেখা উচিৎ।
ভালো কিছু সাবজেক্ট এর উদাহারনঃ Urgent Meeting at 4pm, Half Yearly Report, Notice: New Rules for Attendance ইত্যাদি।
আরো পড়তে পারো | ক্যারিয়ার শুরুতে ব্যর্থ ছিলেন সফল যে ৪ উদ্যোক্তা |
৪. ইমেইল লিখার বেসিক নিয়ম
ইমেইল এর ফন্ট কত হওয়া উচিৎ, এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় থাকে। সাধারণত ইমেইল এ যে ফন্ট সাইজ দেয়া আছে ওইটায় ব্যবহার করা উচিৎ যদি নিতান্ত কোনো প্রয়োজন না হয় চেঞ্জ না করার।
কোনো লিঙ্ক যদি শেয়ার করা হয় তাহলে নিশ্চিত হয়ে নাও তুমি লিঙ্কটা অ্যাক্সেস এর অনুমতি সেট করেছো কিনা (বিশেষ করে গুগল ড্রাইভ এর লিঙ্ক শেয়ার এর ক্ষেত্রে)।
আর ইমেইল এর শুরু কিংবা শেষ করতে কিছু নিয়ম মানতে হবে। যেমনঃ
শুরুতেঃ
Formal | Informal |
Dear Mafruha Mam | Hey Nusrat |
Hello Shakil Bhaiya | Hi Ayman |
শেষেঃ
Formal | Informal |
Best Regards | Cheers |
Sincerely Yours | Thanks |
খেয়াল রাখবে, ইমেইলে কখনো ইমোটিকন ব্যবহার উচিৎ নয়। Informal মেইলে হয়ত করতে পারো তবে Formal ইমেইল এ ভুলেও না!
সব মেইল শেষ হয় প্রেরক এর নাম দিয়ে। তবে নাম এর পরিবর্তে যদি Signature ব্যবহার করা যায় তবে সেটিকে দেখতে আরো বেশী প্রোফেশনাল লাগে। ইমেইল এর সেটিংস্ এ এই সিগনেচার সেট করে রাখা যায়। তাহলে প্রতিটা মেইল এর শেষে ঐ সিগনেচার আটোমেটিক চলে যাবে।
আরো পড়তে পারো | ফেইল মানেই কি সব শেষ? |
৫. শর্ট ফর্ম এর ব্যবহার
ইমেইল এ সাধারণত শর্ট ফর্ম ব্যবহার করা উচিৎ না। তবে ইদানিং বেশ কিছু শর্ট ফম এর ব্যবহার দেখা যায়। নিচে কিছু বহুল ব্যবহিত শর্ট ফর্ম এর অর্থ দেওয়া হলো যাতে কেউ এইসব শর্ট ফর্ম এর যেকোনো একটা ব্যবহার করে তোমাকে মেইল করলে, তোমার সেগুলো বুঝতে অসুবিধা না হয়।
Short Form | Meaning | কেন ব্যবহার করা হয়? |
OOO | Out Of Office | ছুটিতে থাকলে |
LMK | Let Me Know | প্রেরককে প্রয়োজনে জানাতে |
ASAP | As Soon As Possible | গুরোত্ত বুঝাতে |
IK | I Know | আমি জানি |
NRN | No Reply Necessary | উত্তর দেয়ার প্রয়োজন না থাকলে |
EOM | End Of Message/Mail | মেইল/মেসেজ শেষ |
PRB | Please Reply By | নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই উত্তর দিতে হলে |
EOD | End Of Day | নির্দিষ্ট দিনের মধ্যেই উত্তর দিতে হলে |
IMO | In My Opinion | প্রসঙ্গক্রমে কিছু বলতে |
BTW | By The Way | নিজের মতামত উপস্থাপনে |
FYI | For Your Information | প্রাপককে কোনো তথ্য জানাতে |
আরো পড়তে পারো | ভার্সিটি জীবন শুরুর আগে করে ফেলো এই ৫টি কাজ |
৬. Reply এবং Reply All এর মধ্যে পার্থক্য
সাধারণত আমরা কোনো মেইল এর উত্তর দেয়ার জন্য Reply ব্যবহার করি। কিন্তু যখন কোনো Group Mail কিংবা একের অধিক প্রাপক সম্বলিত কোনো মেইল এর উত্তর দিবো তখন আমাদের Reply এবং Reply All ব্যবহার এ সতর্ক থাকতে হবে।
যখন কোনো Group Mail এর উত্তর দিতে যাবে তখন Reply তে ক্লিক করলে ঐ Group Mail এ সর্বশেষ যে মেইল করেছেন তার কাছে রিপ্লাই যাবে। আর যদি Reply All এ ক্লিক করা হয় তাহলে ঐ Group Mail এ যতজন মেম্বার আছেন, সবার কাছেই রিপ্লাই যাবে।
আরো পড়তে পারো | সফলতার ৭টি সুত্র |
পরিশেষে, ইমেইল লেখা হলে সাথে সাথেই সেন্ড করে দিবে না। পুরোটা ভালো করে একবার চেক করে নিবে, সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে লিখেছো কিনা। বিশেষ করে কোনো বানান ভুল আছে কিনাও চেক করে নিবে। ৪-৫ মিনিট সময় যদি লেগেও যায় সব কিছু চেক করতে তাহলেও সময় দিবে। ভুল ইমেইল সেন্ড হওয়ার চেয়ে একটু সময় নিয়ে মেইল করা শ্রেয়। তাছাড়া প্রাপক এর আইডি মেইল লেখা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে তখন ইম্পুট করা ভালো।
আর চেস্টা করবে অন্তত প্রতিদিন মেইল বক্স চেক করার জন্য এবং অন্তত ২৪ ঘন্টার মধ্যে রিপ্লাই দিতে। যদি কোনো কারনে তুমি কিছুদিন নেট থেকে দূরে থাকো কিংবা ভ্যাক্যাশন এ থাকো, তাহলে সেটি উল্লেখ করে একটি অটো রিপ্লাই সেট করে রাখবে।
আরো পড়তে পারো |
Google এর যেসব এপ্লিকেশন স্মার্টফোন ব্যবহারকে করবে আরো সহজ |
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অভিনেতা কে জানো? |
ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে কাজে লাগাও |
শিখে নাও কিভাবে ফোন কাভার বানাবে! |